’৯৯ বিশ্বকাপের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হলো মিনহাজুলকে

খেলোয়াড়ি জীবনে বোলারদের বহু তোপই তো সামলেছেন মিনহাজুল আবেদীন। তবে নির্বাচক হিসেবে আজ যে তোপের মুখে পড়লেন, নিশ্চিত এমন অভিজ্ঞতা তাঁর আগে কখনো হয়নি। সংবাদমাধ্যম থেকে ধেয়ে যাওয়া একেকটা বাউন্সার সামলাতে ভীষণ হিমশিমই খেতে হয়েছে বিসিবির প্রধান নির্বাচককে!
মাহমুদউল্লাহ-মুমিনুল হকের দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে নির্বাচকদের, অনুমান করা যাচ্ছিল আগে থেকেই। আজ হয়েছেও তাই। তবে দুজনের বাদ পড়া নিয়ে মিনহাজুলের যুক্তি, ‘শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যে টেস্ট খেলেছি (মার্চে) তাতে মাহমুদউল্লাহ ছিল না। শ্রীলঙ্কার পরই আমরা এই টেস্টটা খেলতে যাচ্ছি। আর মুমিনুলের সাম্প্রতিক যে ফর্ম, জানুয়ারি থেকে শ্রীলঙ্কা সিরিজ পর্যন্ত ছয়টা ইনিংসে মাত্র একটা ফিফটি। এই পারফরম্যান্সের পর...তারপরও সে আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে আছে। যখন দরকার হবে ওকে কাজে লাগানো হবে।’
নিজেদের কন্ডিশনে উপমহাদেশের বাইরের একটা দলের বিপক্ষেও শ্রীলঙ্কায় শততম টেস্টের সমন্বয়টা ধরে রাখতে চাইছেন বিসিবির নির্বাচকেরা। যদিও শ্রীলঙ্কায় ওই টেস্টে না থেকেও নাসির হোসেন, শফিউল ইসলাম ও লিটন দাস সুযোগ পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহর চেয়ে বেশি প্রশ্ন হয়েছে আসলে মুমিনুলকে নিয়ে। টেস্টে যাঁর গড় (৪৬.৮৮) বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ, দেশের মাঠে যাঁর গড় প্রায় ৬০-এর কাছাকাছি, তবুও কেন মুমিনুল উপেক্ষিত থাকলেন?
জবাবে পাল্টা পরিসংখ্যান নিয়ে যে তৈরি ছিলেন মিনহাজুল, ‘সাম্প্রতিক ফর্ম দেখুন, ও যেখানে ব্যাটিং করছে সেখানে ওর চেয়ে আমরা ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকারকে এগিয়ে রাখছি। সৌম্য ৮ ইনিংসের চারটা ফিফটি করেছে। ওর গড় ৪৫.৭৫। এখানে মুমিনুল পিছিয়ে গেছে। দেশের মাঠে ইমরুলের পারফরম্যান্স যথেষ্ট ভালো। চোটের কারণে মাঝে সে খেলতে পারেনি। তবু মুমিনুল আমাদের পুলের মধ্যে আছে। প্রথম টেস্টের জন্য ওকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি বলে ওর ক্যারিয়ার শেষ, এমন নয়।’
সৌম্য সরকারের কথা বললেন মিনহাজুল, বাঁহাতি ওপেনার কিন্তু একটা সময় হারিয়ে ফেলেছিলেন ছন্দ। প্রায় দেড় বছর ফর্মের সঙ্গে যুঝতে থাকা সৌম্যকে বয়ে বেরিয়েছে বাংলাদেশ দল। সেখানে মাত্র দুই টেস্টের পারফরম্যান্স দেখে মুমিনুল বাদ! প্রশ্নকর্তার উত্তর দিতে গিয়ে মেজাজ হারানোর উপক্রম প্রধান নির্বাচকের, ‘টিম ম্যানেজমেন্টের একটা পরিকল্পনা আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দল দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রধান কোচও আছেন নির্বাচক প্যানেলে। আপনি যদি এভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন উত্তর দিতে পারব না। অনেক আলোচনা করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একজন খেলোয়াড়কে নিয়ে আপনি এভাবে জিজ্ঞেস করতে পারেন না।’
মিনহাজুলকে মনে করিয়ে দেওয়া হলো ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেই ঘটনাটাও। শুরুতে বাদ পড়ে পরে জনতার দাবি আর সংবাদমাধ্যমের চাপে তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলে। প্রধান নির্বাচক হিসেবে সেই মিনহাজুল কি সমালোচিত হয়ে পড়লেন আজ? বেশ বিব্রতই দেখাল তাঁকে, ‘এভাবে বললে বিষয়টা ঠিক হবে না। এখানে প্রধান কোচ আছেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আপনারা পরিসংখ্যানে যাচ্ছেন না, মুমিনুলের গত এক বছরে গড় ২৮-এ নেমে এসেছে। যেভাবে শুরু করেছিল সেই ধারাবাহিকতা ওর নেই। একজন খেলোয়াড়কে নিয়ে এত আলোচনা...সামনে ওকে নিয়ে তো আমাদের পরিকল্পনা আছে।’
প্রশ্নের পর প্রশ্ন ছুটে গেল বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দিকেও, যিনি বর্তমান বাংলাদেশ দলের ‘সর্বেসর্বা’। প্রধান নির্বাচক বলেছেন, মুমিনুলের আগের মতো আত্মবিশ্বাস নেই। সেটি যদি না থাকে ফিরিয়ে আনতে কোচের ভূমিকা কী? ‘যারা দলে নেই, তারা অনুশীলন করছে। সে একেবারে দলের বাইরে চলে যায়নি। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে খেলোয়াড়ের আত্মবিশ্বাসটা আসে। সবার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়।’
ছন্দ ফিরে পেতে সৌম্যকে যেভাবে সমর্থন দিয়েছেন, মুমিনুলকে কেন নয়? প্রশ্নটা কোচকেও করা হলো। বাংলাদেশ কোচের ব্যাখ্যা, ‘নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড়কে প্রাধান্য দিই না। প্রাধান্য দিই বাংলাদেশ দলকে। চেষ্টা করি দলকে জেতাতে। আপনারা যাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন, বাদ পড়ার আগে তাদের পারফরম্যান্স আগে দেখুন। তার মানে এই নয় যে তাদের ক্যারিয়ার শেষ।’

মন্তব্যসমূহ